গনিত অলিম্পিয়াডের সাতসতের
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সবাইকে নোটটি
আন্তরিকতার পড়ার জন্য অনুরোধ করছি। সেই সাথে শ্রীপুর সায়েন্স অলিম্পয়াডের সদস্য, ভলান্টিয়ারদের
বিশেষভাবে অনুরোধ করছি নোটটি নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করে অথবা কপি পেষ্ট করে শ্রীপুরের
অনুজদের জানার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
আমি গনিতে কোন পদক বিজয়ী নই। গনিতের প্রতি ছোট থেকে বিশেষ তেমন কোন ভাল লাগা বা গনিত প্রেম ছিল এটাও ঠিক ছিল কিনা? সেটাও ভাল মনে আসছে না। আর সেরকম সুযোগও হয়নি গনিতকে ভালবাসার বা গনিত জানার প্রতি আগ্রহও জন্মায়নি তেমন। কারন পরীক্ষায় পাস করার জন্য যতটা দরকার স্যাররা সাধারনত তার বাহিরে যেতে চান না। তো আমি তাদের ছাত্র হিসেবে এর বাহিরে যাওয়ার চেষ্টাটাও করিনি। সাধারনত এরকমটাই হয়। ব্যতিক্রম আছে আমি যেটা করেছি সেটাই বললাম। সত্য বলতে যখন গনিতের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার সুযোগ ছিল (স্কুল, কলেজে পড়া অবস্থায়) তখন জানতামই না বাংলাদেশ গনিত অলিম্পিয়াড কি? গনিত প্রথম আলো উৎসব কি? গনিত আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড কি? এগুলোতে অংশ নেওয়ার সুফল কি? জানার মত কোন ব্যক্তি বা উৎস হাতের কাছে পায়নি। জানতে পারলে বিজয়ী হওয়ার যোগ্যতা হয়ত নেই কিন্তু অংশগ্রহনটা করতাম বলে বিশ্বাস। যাক নিজের কথা বলে আর আক্ষেপ বাড়াবো না।
অনেকে মনে করেন নিজে যেটা পারিনি সেটা অন্যকে কিভাবে বলি? আমারও মনে হয় আমিও এর বাহিরে নয়। কিন্তু আমি যেটা করতে পারিনি সেই ব্যর্থতা যদি আমার পরবর্তী প্রজন্মে থেকে যায় এবং সেখান থেকে যদি তাদের বের করতেই না পারি তাহলে আমাদের উন্নতিটা কোথায়? আমি মনে করি আমাদের সময় আমরা জানতেই পারি নি, অথচ আমার অনেক বন্ধুর যোগ্যতা ছিল প্রতিযোগিতায় লড়ার। আজও আমাদের অনেক ছোট ভাই বোন আছে যাদের সামর্থ্য আছে এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার। সেই বোধ থেকেই আজ আমি লিখতে বসেছি। আমি আগেই বলেছি আমি গনিতে কোন পদক বিজয়ী নয়। তাই যা লিখছি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নয়, বাংলাদেশ থেকে যারা গনিতের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে তাদের বিভিন্ন লিখা পড়ে, গনিতের বিভিন্ন ব্লগ পড়ে, গনিতের উপরে লিখা কয়েকজন স্যারের অনুচ্ছেদ পড়ে এবং প্রথম আলো গনিত উৎসব এর একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর সাথে কথা বলে যতটুকু পেয়েছি, BdMO এর ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য এবং কিছু প্রতিযোগির মমতামত হুবুহ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
প্রস্তুতি বিষয়ক সাধারণ প্রশ্নঃ-
গণিত অলিম্পিয়াড কী?(BdMO সাইট থেকে)
গণিত অলিম্পিয়াড শিক্ষার্থীদের গণিতে দক্ষতা এবং আগ্রহ বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত দপাতায়। প্রতিটি ভেন্যুতে সর্বোচ্চ প্রায় ১০০০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারে। তাই আগে ভাগে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলাই ভাল।
২য় ধাপ হল বাংলাদেশ জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড। সারাদেশে আঞ্চলিক প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের নিয়ে ঢাকায় ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এটি সাধারণত দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমদিন সকালে মূল অলিম্পিয়াড পর্ব। এর পর প্রতিযোগীদের জন্য নানা পর্বের আয়োজন থাকে। পরদিন পুরস্কার বিতরণীল মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
৩য় ধাপ হল গণিত ক্যাম্প এবং Team Selection Test (TST) । জুনিয়র, সেকেন্ডারী এবং হায়ার সেকেন্ডারী পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মার্চের দিকে প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী গণিত ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য দল নির্বাচন করা হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যেহেতু আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ইংরেজীতেই সবকিছু করতে হয়, তাই ক্যাম্পের পাঠদানের মাধ্যমও মূলত ইংরেজী। তবে এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ ইংরেজীতে গণিত শেখা খুব একটা সমস্যার ব্যাপার নয়।
গণিত অলিম্পিয়াডে কারা অংশ নিতে পারবে?(BdMO সাইট থেকে)
বিভাগীয় গণিত উৎসবে ৩য় থেকে ১২শ শ্রেণীর (বা সমমানের) শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবে। বাংলাদেশে ৪টি ক্যাটেগরীতে ভাগ করে অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়:
- প্রাইমারী: ৩য় থেকে ৫ম
- জুনিয়র: ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম
- সেকেন্ডারী: ৯ম থেকে ১০ম
- হায়ার সেকেন্ডারী: ১১শ থেকে ১২শ শ্রেণী।
গণিত অলিম্পিয়াডে কী ধরণের প্রশ্ন (সমস্যা) দেওয়া হয়?(একজন বিজয়ীর পোষ্ট থেকে)
গণিত অলিম্পিয়াডে কী ধরণের সমস্যা দেওয়া হবে তার কোন বাধাধরা নিয়ম নেই। তাছাড়া কোন বই থেকে সমস্যা না দিয়ে সাধারণত মৌলিক সমস্যা, বা কোন সমস্যাকে পরিবর্তিত করে নতুন সমস্যা দেওয়া হয়, সুতরাং কমন পড়ার সম্ভাবনা নেই ! তবে সাধারণত, বিভাগীয় গণিত অলিম্পিয়াডে ৭০-৭৫ মিনিট সময়ের ভেতর ১০-১২ টি সমস্যার সমাধান করতে হয়। এখানে কোনকিছু প্রমাণ করতে হয় না; কেবল উত্তর লিখলেই চলে। জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডেও ১০-১২ টি সমস্যার সমাধান করতে হয়। তবে এখানে প্রমাণ নির্ভর বেশকিছু সমস্যা দেওয়া হয় এবং সময় ক্যাটেগরীভেদে ২-৪ ঘন্টা। আগের বছরগুলোর গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন এবং BdMO এর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়?(একজন ক্ষুদে
গনিত প্রেমীর পোষ্ট থেকে)
এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া বেশ কঠিন। কারণ অনেকে প্রচুর পড়াশোনা বা
অনুশীলনের পরও হয়ত সমস্যা সমাধানে তেমন ভাল করবে না। অনেকে অল্প চেষ্টাতেই বেশ ভাল
করতে পারে। তবে সমস্যা সমাধান কখনোই সহজ কোন বিষয় নয় (অন্তত শুরুতে তো নয়ই)। তাই এক্ষেত্রে
পরামর্শ হল ধৈর্য না হারিয়ে বার বার চেষ্টা করে যাওয়া। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি
যে গণিতে দক্ষতা যেমন রাতারাতি অর্জন করার মত বিষয় না, তেমনি এমন কোন বিষয়ও না যা নির্দিষ্ট
একটা পথ অবলম্বল করলে বা কয়েকটা বই পড়ে ফেললেই শেখা যাবে। তবে শুরুতে সমস্যাগুলো খুব
কঠিন লাগলেও আস্তে আস্তে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে সামঞ্জস্য (Relation) এবং pattern নিজে
থেকেই যখন আবিষ্কার করতে পারবে তখন সহজ সমস্যা সমাধান করা আরও অনেক সহজ হয়ে যাবে। কী
ধরণের বিষয় কোন ক্যাটেগরীতে আসতে পারে তা জানতে এখানে ক্লিক কর থেকে BdMO syllabus লেখা pdf দেখতে পার। তবে বিভাগীয়তে মূলত:
পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান কতটুকু কাজে লাগাতে সক্ষম সেটা দেখা হয়। কিন্তু জাতীয় অলিম্পিয়াডে
অনেক advanced বিষয় থেকে সমস্যা দেওয়া হতে পারে যেটা আমাদের সিলেবাসে নেই (যেমন: সংখ্যাতত্ত্ব
বা কম্বিনেটরিকস)।
সমস্যা সমাধান সম্পর্কে জানার জন্য এবং সাধারণ কলাকৌশলে শেখার জন্য সবচেয়ে ভাল (এবং highly recommended) বই হল: The art and craft of problem solving। এছাড়া USA গণিত দলের প্রাক্তন কোচ কিরণ কেদলায়ার এই নোটটিতে তিনি চমৎকার কিছু টিপস দিয়েছেন।সর্বশেষ কথা হল সঠিক অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই।
গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য কী কী বই পড়া প্রয়োজন?(BdMO সাইট থেকে)
সমস্যা সমাধান সম্পর্কে জানার জন্য এবং সাধারণ কলাকৌশলে শেখার জন্য সবচেয়ে ভাল (এবং highly recommended) বই হল: The art and craft of problem solving। এছাড়া USA গণিত দলের প্রাক্তন কোচ কিরণ কেদলায়ার এই নোটটিতে তিনি চমৎকার কিছু টিপস দিয়েছেন।সর্বশেষ কথা হল সঠিক অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই।
গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য কী কী বই পড়া প্রয়োজন?(BdMO সাইট থেকে)
প্রাইমারী এবং জুনিয়র ক্যাটেগরির শিক্ষার্থীদের জন্য মূলত নিজ ক্যাটেগরির পাঠ্যবইয়ের দিকেই বেশি নজর দেওয়া উচিত। তবে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান যথেষ্ট নাও হতে পারে। বাংলা বইয়ের ভেতর problem book হিসেবে “গণিত এবং আরও গণিত” এবং “নিউরনে অনুরণন” ছোটদের জন্য ভাল।
সেকেন্ডারী আর হায়ার সেকেন্ডারী ক্যাটেগরির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই যথেষ্ট নয় (তবে অবশ্যই পাঠ্যবইয়ের উপর ভাল দখল থাকতে হবে)। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আলাদা আলাদা বিষয়ের উপর textbook থেকে মূল বিষয়গুলো পড়ে problem book থেকে অনুশীলন করতে পার। তবে এক্ষেত্র বাংলা ভাষায় লেখা বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। সেকারণে মূলত: ইংরেজী বইই পড়তে হবে।
আমি অনেক বই পড়েছি, সমাধান বুঝতেও কোন সমস্যা হয় না; কিন্তু আমি সমস্যা সমাধান করতে পারি না কী
করব??(পদক বিজয়ী একজন ক্ষুদে গনিত প্রেমীর পরামর্শ)
প্রথমে একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে বলা দরকার। অনেকের ধারণা যারা জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয় বা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে মেডেল যায় তারা একটা সমস্যা নিয়ে বসে…আর কিছুক্ষণ পর একটা ম্যাজিকের মত সমাধান বের করে (এমন যদি হতো!)…কিন্তু এটা পুরোপুরি সত্যি না। আসল ব্যাপার হল যারা অলিম্পিয়াড সমস্যা সমাধান করে দীর্ঘদিনের জন্য তারা বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে একটা pattern খুঁজে পায়। ফলে তার কোন উপায়ে আগাতে হবে সেটা বুঝতে পারে (এটাকে অনেকে intuition বলে)। এটা আসলে দীর্ঘদিনের অনুশীলনের ফল। তাছাড়া তারা নানা দিক থেকে দীর্ঘক্ষণ ধরে ধৈর্য ধরে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালায়। আমাদের কোচ ড. মাহবুব মজুমদারের মতে: “The best problem solvers are those, who work on problems like a mad dog. They are not necessarily more genius than you.”
আরেকটা ব্যাপার হল সঠিকভাবে সমস্যা সমাধান না করা। সমস্যা সমাধান করার সময় যদি কোন সমস্যা খুব সহজ লাগে তাহলে সেই level এর সমস্যাতে মোটামুটি পারদর্শী হয়েছ বলে ধরে নেওয়া যায়। তাই সেক্ষেত্রে আরও একটু advanced level এর সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। অর্থাৎ সহজ সমস্যা সমাধানের চেয়ে challenging সমস্যা সমাধান করলেই দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব। তবে সহজ সমস্যা তো আগে পারতেই হবে! আর কোন সমস্যা সমাধানের পর অন্য কোন সমাধান দেখা বা দীর্ঘসময় ধরে সমাধান না করতে পারলে সমাধান দেখে শেখার চেষ্টা করলেও অনেকসময় অনেককিছু শেখা যায়।
গণিত অলিম্পিয়াডের বই কোথায় পাওয়া যায়?
(যেখানে আমি খোঁজ নিয়ে সব বইয়ের সন্ধান পেয়েছিলাম সেটাই শেয়ার করলাম)
BdMO এর ওয়েবসাইটে বুক লিষ্ট পাওয়া যাবে। আমি একটা ফোন নম্বর শেয়ার করছি যোগাযোগ করলে হবে ইনশাল্লাহ।
মোবাঃ01913-916631(সুমন ভাই)
অনেকের ধরনা, আমি তো অলিম্পিয়াডে পুরস্কার পাব না, আমার এসব করে লাভ কী?
(গনিত অনলাইন কমিউনিটি ও ক্ষদ্র জোবানের নিজস্ব মতামত থেকে)
শুধু পুরস্কার পাবার জন্য গণিত অলিম্পিয়াডে আসতে হবে এমন কোন কথা নেই। একটা সমস্যা সমাধান না করলেও সেটা অনেকক্ষণ চেষ্টা করলে যেমন সেটা থেকে অনেক কিছু শেখা যায়, তেমনি গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিলে পুরস্কার না পেলেও গণিতের প্রতি আগ্রহ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে সেটাও কিন্তু কম না। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে অনেকেই প্রথমবার অংশ নিয়ে ভাল না করলেও পরেরবার অনেক ভাল ফলাফল করেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল এরকম নেতিবাচক চিন্তা না করে আত্মবিশ্বাস রাখ যে তুমি পারবে; তাহলেই তুমি ভাল করতে পারবে।
গণিত বিষয়ে কিছু ওয়েবসাইটের লিঙ্ক প্রয়োজন।(গুগল থেকে)
যারা মোটামুটি গণিত অলিম্পিয়াডে শুরুর ধাপটা পার করতে পেরেছ, তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ ওয়েবসাইট হল The art of Problem solving(Mathlinks নামেও পরিচিত)। আরও লিঙ্ক পাওয়া যাবে এখানে
আশা করি আমার এই নোটটি কারো না কারো কাজে আসবে। যদি একজনেরও কাজে আসে তবুও আমার সংগ্রহ সার্থক। আগামী ডিসেম্বরে গনিত উৎসবের সকল প্রতিযোগির জন্য শুভকামনা ও দোয়া রইল।
No comments