প্রিয় বালক বেলা
আমার প্রিয় বালক বেলা, মনে আমার টুকরো কথার ভিড় জমেছে মেলা।যেমন করে বৈশাখী মেঘ ভরিয়ে তোলে আকাশ,পাগলা হাওয়া যেমন করে কাঁপায় তরুশাখা,দামাল ঢেউ-এ যেমনি ভাবে দুলতে থাকে ভেলা, তেমনি করে তুমি আমায় দোলাও বালক বেলা। তুমি এখন কেমন আছো? ভালো নেই, না? জানি! আমার কথা আর বলো না, আমার এখন সময় নিয়ে বড্ডো টানাটানি। তাছাড়া এই আমায় এখন রাস্তা ঘাটে হঠাৎ দেখলে তুমি চিনতেও পারবে না। সবাই কেমন পাল্টে যাচ্ছে জানো? চেনা লোককেও আজ মনে হয় ভীষণই অচেনা।
বালক বেলা তুমি সেই আগের মতোই রোজ চুরনি নদীর সাঁকোয় বসে আকাশে চোখ রাখো? সন্ধে নামার পরেও কি ঠাঁয় একলা বোসে থাকো? মনে পড়ছে শাঁখ বাজতেই টিউকলে হাত ধুয়ে বাড়ি ফিরতে কালি তলার চাতালটাকে ছুঁয়ে। ফেরার সময় স্ট্যাপ ছেড়া নীল হাওয়ায় চটি হাতে এক দৌড়ে হালনাত্নের বাঁশ বন টপকাতে। কালো বেড়াল দেখলে তুমি এথনো ভয় পাও? রোজ সকালে কাল মেঘ বা চিরতার জল খাও? সজনের ফুল, পুই মেটুলি, কুমড়র ফুল ভাজা, লাউ চিংড়ি, মোচার ঘন্টো এসবে এখন হয়? তোমার মনে আছে বালক বেলা? মুখে লাগতো বলে তোমার ওল খেতে কি ভয়! জানো? আমার কোতো কিছু জানতে ইচ্ছে করে। নন্দো জেঠু এখনো কি ছিপ দিয়ে মাছ ধরে? তুমি কি আর বই বগলে স্কুলে যাও রোজ? মনিটর হও? ফাস্ট বেঞ্চে বসো? এখনো সেই সেলেট পেন্সিল? না কি মাস পেরনো ক্যালেন্ডারের পেছনে আঁক কশো? বিভুতি স্যার কেমন আছেন? পন্ডিৎ স্যার? খরকুমার বাবু? এখনো কি সুবোধ স্যারের সেই রকমই তেজ? ‘গলায় কি তোর ব্যাঙ ঢুকেছে? কি খাস? দুধ সাগু?’
বালক বেলা, তুমি এখন ঘুড়ি উড়াও? বলো। গিট্টু খেলো? ঢিল নঙোকর করো? সকাল বেলা পূবের খোলা জানলাটাতে বসে রাজ কাহিনি, আবল তাবল, চাঁদের পাহাড় পড়ো? রোজ সকালে একটা কথা ভীষণ মনে পরে, স্কুলের মাঠে ইউক্যাল্কেটাস গাছটা কি আজো আছে? রাম বাহাদুর দাড়ওয়ান কি গোফ পাকিয়ে বলে? ‘এই লারকা খুব সাবধান হাত দিবে না গাছে।’ ঐ যা দেখো! সেই কথাটাও লেখা হয় নাই, জানো? তোমার যে সাইকেলটা ছিলো সেটা আজো রাখা আছে চিলে কোঠার ঘরে। তোমার প্রিয় কাঠের ঘোড়া যেটা পাঁচ বছরের জন্ম দিনে দাদায় দিয়ে ছিলো, ওটা দেখলেই তোমার কথা বড্ডো মনে পড়ে। তোমার ঝিনুক বাটি, তোমার নামলেখা গ্ল্যাস থালা, লাটায় ঘুড়ি, সিক চাকা, লাড্ডু ডান্ডা গুনি, সবই আছে কাঠের বাক্সে রাখা কোনো কাজেই লাগছে না তাও কেমন করে ভুলি?
বালক বেলা তুমি কি আর গঙ্গাফড়িং ধরো? বাবুই পাখির বাসা পাড়তে ডাব গাছে কি চড়ো? এখানে খুব গাছ কাটা হয়, আকাশ যাচ্ছে হারিয়ে। লম্বা লম্বা বাড়ি উঠছে তাল গাছকেউ ছাড়িয়ে। তুমি ভাবছো বড় বেলাই সবচে ভালো বুঝি কখনো না। শুনলে তুমি খুশি হবে বড়। আমি কিন্তু হারিয়ে যাওয়া বালক বেলাই খুজি। তুমি আমার ছড়ায় ছড়ায় বৃষ্টি দিনের ছবি, তুমি আমার রবীন্দ্রনাথ, সহজ পাঠের কবি, তুমি আমার পাতার বাঁশি, জংধরা ঝুমঝুমি, তুমি আমার রাসের মেলার মুক্ষতা বষ্টমি। জানি না এ চিঠি তোমায় পাঠবো কি ভোবে? বায় পোষ্ট? না কুরিয়ার? ঠিক বুঝতেও পারছি না। এখানেতো সবার এখন সেলফোন, ল্যাপটপ, তায় ভাবছি তোমার ই-মেইল আইডি আছে কি না? সময় কমে আসছে। হাতে কাজ রয়েছে মেলা। ভালো থেকো। এবার তবে আসি বালক বেলা। ভুলেউ যেন আমার কথায় রাগ করো না কিচ্ছু।
ইতি ,
তোমার হারিয়ে যাওয়া ছটফটে সেই বিচ্ছু!!
কৃতজ্ঞতাঃ কণ্ঠকানন
No comments