Header Ads

সাবানের বিভিন্ন রং থাকলেও সাবানের ফেনা কেন সাদা হয়?

অনেকদিন ধরে মাথার ভেতর একটি জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছিল।সেটি আর কিছু নিয়ে নয় সাবান নিয়ে!ইন্টারমিডিয়েট পড়া অবস্থায় সাবানের সংগা, পরিস্কারক হিসেবে সাবানের ক্রিয়া, আর একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ছাড়া তেমন কিছু জেনেছি বলে মনে পড়ে না।একদিন একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে সাবান নিয়ে একটি প্রশ্ন আমার সামনে পড়েছিল,“প্রশ্নটি ছিল এরকম সাবানের বিভিন্ন রং থাকলেও সাবানের ফেনা কেন সাদা হয়?” আমি আমার স্টুডেন্টদের কাছেও প্রশ্নটি করেছিলাম এবং ওদেরকে উত্তরটা বের করার জন্য বলেছিলাম, ইন্টারনেটের এই যুগে হয়ত সবাই ব্যপারটা বের করতে পারবে। তবুও আমি সাবান নিয়ে যতটুকু জানার চেষ্টা করেছি বা বুঝেছি সবার সাথে শেয়ার করার জন্য লিখতে বসেছি।ভুল হলে আশা করি সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!এবং মন্তব্য থাকলে অবশ্যই দিবেন।

যাহোক কাজের কথা শুরু করিঃ-

সাবান কী?

উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবনকে সাবান বলে।একাধিক জৈব অ্যাসিডের লবণ হওয়ায় সাবানের নির্দিষ্ট কোনো সংকেত নেই।সাবান একটি মিশ্র লবণ। 
সাবান ব্যবহারের ফলে ফেনা কেন তৈরি হয়? 
 
আমরা অনেকেই মনে করে থাকি সাবান থেকে ফেনা তৈরি হওয়ার জন্য চর্বি দায়ী। আসলে না চর্বির কারনে এমনটি ঘটে না।ফেনা যে রাসায়নিক পদার্থের দরুন হয়ে থাকে তার নাম “ সোডিয়াম লরেট সালফেট নামক ফোমিং এজেন্ট”।
বেশি চিন্তাশীল মানুষদের জন্যঃআবারো একবার ফেনার ভাবনা!
সাবানের ভেতর সোডিয়াম লরেট বিদ্যমান যার একপ্রান্ত কাপড় বা যে জিনিস ধোয়া হবে তাতে লেগে থাকা তেল বা গ্রিজ জাতীয় অংশের সাথে যুক্ত হয় অন্যপ্রান্তে নাড়াচাড়ার ফলে পানিতে যুক্ত বাতাসও এর সাথে যুক্ত হয়, ফলে ছোট ছোট বুদবুদ তৈরি করে আর এসব বুদবুদের সম্মিলিত রুপই ফেনা।

এবার আসি সেই প্রশ্নে-সাবান বিভিন্ন রং এর হলেও সব রং এর সাবানের ফেনা কেন সাদা?
আমরা জানি সাবান বিভিন্ন রঙের হয়। আমরা যেটা গায়ে মেখে গোসল করি সেটা রঙিন সুগন্ধি সাবান। সাবানের রঙ আলাদা। এই ধরুন লাল, নীল, বেগুনি, সাদা, গোলাপি, হলদে, সবুজ প্রভৃতি। সাবানের রঙ হরেক রকমের হলেও সব সাবানের ফেনার রঙ কিন্তু সাদা।কেন? কারণ সাধারণভাবে বলতে গেলে সাবানের ফেনায় এলোমেলো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে আলোয় বিভিন্ন রঙের সম্মিলিত উপস্থিতি।সাবানের ফেনা আসলে সাবানের নানা মাপের অসংখ্য বুদবুদের সমষ্টি। সাবান গোলাপানির কণার মধ্যে বাতাস যখন আটকে পড়ে, তখনই তা প্রায় গোলাকৃতি বুদবুদের আকার নেয়। সাবানগোলা পানির পৃষ্ঠটান কম হওয়ায় বাতাসভর্তি পানির গোলকের দেয়াল সহজেই প্রসারিত বা বিস্তৃত হয়। ওই দেয়ালের পুরুত্বের ওপর তারপৃষ্ঠদেশ থেকে রঙের সামান্য আভাস থাকলেও তা অত্যন্ত হালকা বা ফিকে দেখাবে।কিন্তু অসংখ্য বুদবুদের সমষ্টি সাবানের ফেনায় যখন সূর্যরশ্মি বা কৃত্রিম আলো পড়ে, তখন আলোক তরঙ্গ ওই বুদবুদ থেকে বিচ্ছুরিত হয়। বিচ্ছুরিত আলোকের রঙবুদবুদের মাপের ওপর নির্ভরশীল। খুদে মাপগুলো যেমন বেগুনি-নীলাভ আলোর জন্যদায়ী, তেমনি যত বড় মাপের বুদবুদ হবে ততই দীর্ঘতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে দিকে বিচ্ছুরিত আলোর রঙ সরে যেতে থাকবে। অর্থাৎ সবুজ থেকে হলদে, তার থেকে লালেরদিকেও। এই এলোমেলো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে আলোয় প্রায় সব রঙ বর্তমান থাকে বলেই তাদের সম্মিলিত উপস্থিতি ফেনাকে সাদা করে তোলে। 

 সাবানের গনিত প্রেমঃ-

গনিত হল এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিসগুলোর একটি।যাকে বিজ্ঞানের ভাষা বলা হয়, সে বিষয়টি নিয়ে সাবানের ফেনাও যদি কথা বলে তাহলে তো মন্দ নয়!
সাবানের ফেনা এবং এর মিহি জাল শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকেই অভিভূত করে, কিন্তু এর সাহায্যে গণিতের অনেক জটিল সমস্যাও সমাধান করা সম্ভব! মালাগা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন অধ্যাপক গবেষণায় এর প্রমাণ পেয়েছেন। এ ব্যাপারে মালাগা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্লোস ক্রিয়াডো বলেছেন, সাবানের ফেনার সাহায্যে আমরা পদার্থবিজ্ঞানের অনেক পরিবর্তনশীল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পেরেছি। এ সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন সম্প্রতি আমেরিকান জার্নাল অফ ফিজিক্স-এ ছাপা হয়েছে। সাবানের ফেনা সব সময় এমন আকার নেয় যাতে এর স্থিতিস্থাপক শক্তি ন্যূনতম অবস্থায় থাকে। আর এই কারণেই সাবানের ফেনার আকার সব সময় পরিবর্তনশীল আদর্শ ক্যালকুলাসে অবস্থান করে। বিজ্ঞানীরা এখন এমন একটি ফাংশন-এর খোঁজ করছেন যার কারণে সাবানের ফেনা নির্দিষ্ট সংখ্যায় সীমাবদ্ধ থাকে। ক্রিয়াডো’র মতে গণিতের পরিবর্তনশীল সমস্যা সমাধানের অন্য আরও অনেক উপায় থাকলেও এই পদ্ধতির মাধ্যমে সাবানের ফেনার জ্যামিতিক নানা আকৃতি ব্যবহার করে অনেক আনন্দের সঙ্গে শিক্ষাও লাভ করা যায়।

বিঃদ্রঃ বিষয়টি কোন পরীক্ষাগারে প্রমান করে আমি দেখিনি বা আমার সে সুযোগও হয়নি, হবেও না হয়ত। থিওরিটিক্যালি আমি এই তথ্যগুলি পেয়েছি।এর থেকে ভাল অনেকেই জেনে থাকতে পারেন।তাদের প্রতি অনুরোধ থাকলো জানানোর জন্য।  

1 comment:

Powered by Blogger.